বাংলাদেশ

নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিকতা, সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে জোর দাবি সংশ্লিষ্টদের

চাকরি হারানোর ভয়, হামলা-মামলার শঙ্কা এবং প্রাণনাশের হুমকির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাস্তবতা এখনও উদ্বেগজনক। যদিও রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে স্বীকৃত, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দূরে থাক, তারা প্রতিনিয়ত নানা রকম হুমকির মুখে পড়ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।

তথ্য বলছে, কর্মসূচি থাকুক বা না থাকুক, হামলার শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণ-আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন সাংবাদিক এবং আহত হন অন্তত ১১৭ জন। পুরো বছরজুড়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ছিল ৫৩১টি, যার মধ্যে সন্ত্রাসী হামলায় পড়েছেন ৭৬ জন।

২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত আরও ১০২ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন, যাদের মধ্যে ৪৮ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সরাসরি হামলার মুখে পড়েন। শুধু হামলাই নয়, রয়েছে হুমকি, মামলা ও হয়রানির নানা উদাহরণ। বিচারহীনতা দীর্ঘায়িত হওয়ায় অনেক ঘটনা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে আদালতের অন্ধকার ফাইলঘরে।

তবে আশার খবরও রয়েছে। সাংবাদিকদের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এক ধাপ এগোলেও, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সর্বশেষ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও ৩১তম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন এ প্রসঙ্গে বলেন, "গণমাধ্যম নিঃসন্দেহে প্রশ্নমুক্ত নয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র মতো অভিযোগ ভয়ংকর এবং অযৌক্তিক। রাষ্ট্র কাঠামোর পাশাপাশি জনমানসিকতার পরিবর্তন না হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।"

এদিকে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ জানান, কমিশন ইতোমধ্যে সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে এবং প্রেস কাউন্সিলের পরিবর্তে একটি স্বাধীন প্রেস কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তাঁর মতে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের সার্বিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও মনে করছেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত ভূমিকা অপরিহার্য।

মতামত দিন

নিউজলেটার

থাকার জন্য আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।